একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম কার্যকরী আবিষ্কার হলো ইন্টারনেট। দুনিয়া বদলে দেওয়া এই ইন্টারনেটের ওপর এখন প্রায় সকল মানুষ নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন দেশ ইন্টারের ওপর ভিত্তি করে উন্নত হচ্ছে। বাংলাদেশেও গত ১০ বছরে বিশাল পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে ইন্টারনেটের কারণে।
যদিও অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশের ইন্টারনেটের গতি অনেক কম।আপনি কি ইন্টারনেটের গতি নিয়ে বিরক্ত? আপনি কি চান ধীর গতির কারণ ও সমাধান? জানতে হলে আজকের আর্টিকেল টি আপনার জন্য।
কেন স্পিড আসছে না বাংলাদেশের ইন্টারনেট, এবং এর সমাধান নিয়ে আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করবো।
কেনো দ্রুত হচ্ছে না বাংলাদেশের ইন্টারনেট?
বাংলাদেশ ইন্টারনেট গতির দিক দিয়ে ১৪৫ টি দেশের মধ্যে ১০৫ তম। সংযুক্ত আরব আমিরাত এদিক দিয়ে ১ম স্থানে রয়েছে। এটির স্পীড ৩২৪.৯২ এমবিপিএস।
তাছাড়াও যদি আমরা আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের দিকে তাকাই তবে দেখা যায় ভারত ও ১৮ তম স্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান গতি ২৩ এমবিপিএস।
বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত করতে হলে ইন্টারনেটের গতি আরো বাড়ানোর প্রয়োজন। দিন দিন প্রযুক্তি উন্নত হচ্ছে ও আমাদের জীবন ধারণকে সহজ করে তুলছে।
যার ফলে দৈনন্দিন জীবনে ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়েই চলেছে। তাই কেন দ্রুত হচ্ছে না বাংলাদেশের ইন্টারনেট তা এখন আমরা জানবো।
১. ইন্টারনেটের গতি বাড়াতে হলে বেশি ব্যান্ডউইথ বাড়াতে হবে ফলে ইন্টারনেটের খরচ বাড়বে। এতে করে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত গ্রাহকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
২. যখন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়ে যায় তখন টোলিকম কোম্পানিকে ব্যান্ডউইথ বাড়াতে হয়। যদি টেলিকম কোম্পানি ব্যান্ডউইথ না বাড়ায় তবে ইন্টারনেটের গতি কমে যায়।
৩. টেলিকম কোম্পানি গুলো যদি ইন্টারনেটের গতি বাড়াতে চায় তবে তাদের অবকাঠামোগত পরিবর্তন করতে হবে। যা বাংলাদেশের মতো দেশের টেলিকম কোম্পানি গুলোর জন্য খু্ব কঠিন পদক্ষেপ।
৪. দেশের জন্য ব্যান্ডউইথ কেনার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পাইকারি বাজার থেকে না কিনে মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছ থেকে কিনতে হচ্ছে। ফলে ব্যান্ডউইটের দাম বেশি পড়ছে। এতে করে কম গতিতে আটকে রয়েছি আমরা।
৫. তত্ত্ববোধক সরকার কর্তৃক প্রণীত “২০০৭ সালের ইন্টারন্যাশনাল লং ডিসটেন্স কমিউনিকেশন সার্ভিসেস নীতিমালা” প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের কারণে মধ্যস্বত্বভোগীদের উত্থান ঘটেছে। তাদের কারণে দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৬. সাবমেরিন কেবল কোম্পানি যখন ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ের বিল বকেয়া থাকে তখন ব্যান্ডউইথ ডাউন করে দেয়। ফলে ইন্টারনেটের গতি অনেক ধীর হয়ে যায়।
৭. খাজা টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ডের পর অনেক ইকুইপমেন্ট নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে ইন্টারনেট সেবা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
৮. বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলস পিএলসি (বিএসসি পিএলসি) জানিয়েছে, সাম্প্রতিক ইন্টারনেটের ধীর গতির পেছনে সিঙ্গাপুরে ফাইবার কেবল ‘ব্রেক’ দায়ী।
ইন্টারনেটের ধীর গতি জনজীবনে বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় গুলোর দিকে আমরা ফোকাস করবো।
নীতিমালা বাতিল: “২০০৭ সালের ইন্টারন্যাশনাল লং ডিসটেন্স কমিউনিকেশন সার্ভিসেস নীতিমালা” বাতিল করে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য শেষ করতে হবে।
আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ব্যান্ডউইথ ক্রয়: মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছ থেকে ব্যান্ডউইথ না কিনে সরাসরি আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ব্যান্ডউইথ ক্রয় করতে পারলে ইন্টারনেটের দাম যেমন কমবে তেমনি গতিওয বাড়বে।
সরকারের দৃঢ় পদক্ষেপ: সরকার কর্তৃক ইন্টারনেটের গতি বাড়াতে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া হলে ইন্টারনেটের গতি বাস্তবিক ভাবেই বাড়তে পারে।
টেলিকম কোম্পানির অবকাঠামোগত উন্নয়ন: বাংলাদেশের টেলিকম কোম্পানি গুলো উন্নত সেবা প্রদানের জন্য নিজেদের অবকাঠামোগত উন্নয়নে আগ্রহী নয়। তারা যদি অবকাঠামো পরিবর্তন করে তবে দেশে ইন্টারনেটের গতি বাড়াবে।
সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানির সাথে চুক্তি: সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানির সাথে যদি সরকার কর্তৃক চুক্তি হয় তবে ইন্টারনেট ব্যবস্থার উন্নতি ঘটবে।
ইন্টারনেটের ধীর গতি বর্তমানে বাংলাদেশের সকল ধরনের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরাই যথেষ্ট বিরক্তিকর অবস্থায় আছে এই ইন্টারনেটের ধীর গতির কারণে।
১৭ এপ্রিল তারিখে বিএসসিপিএলসি ঘোষণা দিয়েছিল যে, তারের ওপর রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে, যার ফলে ইন্টারনেট সেবা কিছুদিনের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যদিও এই রক্ষণাবেক্ষণটি বিভ্রাটের জন্য দায়ী কিনা তা এখনো স্পষ্ট নয়।
ইউনাইটেড ক্যাবল কোম্পানি অনুমান করেছে, ‘বর্তমান দীর্ঘমেয়াদি বিভ্রাটের পরে একটি অস্থায়ী বিভ্রাটের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে আমাদের ধারণা হলো যে তারের একটি শান্ট ফল্ট হয়েছে যেখানে পলিথিন নিরোধক-এর ভিতর দিয়ে পানি প্রবেশ করেছে।” দ্রুত সমাধান হলে ইন্টারনেটের গতি বাড়তে পারে।