একবিংশ শতাব্দীতে এসে আমরা যেসব মুখ্য সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি তার মধ্যে অন্যতম হলো ইন্টারনেটের প্রতি আসক্তি। এই আসক্তি আজ জনজীবন কে অস্থির করে তুলছে। আজকের আর্টিকেলে আমরা ইন্টারনেটের প্রতি আসক্তি কারণ, আসক্তি কুফল ও আসক্তি কমানোর উপায় সম্পর্কে আলোচনা করবো।
ইন্টারনেটের প্রতি আসক্তির পেছনে অনেক কারণ দায়ী। প্রথমদিকে শুধু তরুণ সমাজের আসক্তি দেখা গেলেও ধীরে ধীরে টিনেজদের মধ্যে এবং করোনা মহামারীর মধ্যে বাচ্চাদের ও বয়স্কদের ইন্টারনেট আসক্তি তৈরি হয়েছে। ফলে এখন সকল স্তরের মানুষ ইন্টারনেটের প্রতি আসক্ত। ইন্টারনেটের প্রতি আসক্তির কারণগুলি হলো:
১.সময় কাটানোর জন্য মানুষ ইন্টারনেটের সময় ব্যয় করতে করতে ইন্টারনেটের প্রতি আসক্ত হয়ে যায়।
২.ছোট বাচ্চা থেকে টিনেজ বয়সীরা ইন্টারনেট গেইমে আসক্ত হয়ে প্রচুর সময় নষ্ট করছে। এখন তরুণ প্রজন্ম ও এতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তরুণ প্রজন্ম এখন পাবজি, ফ্রী ফায়ার ও এজাতীয় গেইমস নিয়ে প্রচুর অহেতুক সময় নষ্ট করছে।
৩.আগে বাচ্চারা টিভিতে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণে কার্টুন দেখতো। এখন ইন্টারনেটের কারণে বাচ্চারা সারাদিন আনলিমিটেড কার্টুন দেখার সুযোগ পায়। ফলে ইন্টারনেটের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছে।
৪.যারা ইনট্রোভার্ট তারা যখন কোনো পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে না তখন তারা তাদের বেশিরভাগ সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যয় করে।
৫.টিনেজ থেকে শুরু করে মাঝবয়সী মানুষেরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চরমভাবে আসক্ত। তাদের কাছে যেন ইন্টারনেটই একমাত্র বিনোদনের মাধ্যম।
৬.কর্মব্যস্ত বাবা মায়েরা তাদের সন্তানদের শান্ত রাখতে দীর্ঘ সময় ইন্টারনেট করতে দেন। এটিও ইন্টারনেটের প্রতি আসক্তির প্রধান একটি কারণ।
ইন্টারনেটের প্রতি আসক্তির মারাত্মক কুফল লক্ষণীয়। যা আমাদের কর্মক্ষম সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। ইন্টারনেটের প্রতি আসক্তির কুফল জানতে নিচের পয়েন্টগুলির দিকে ফোকাস করুন:
ইন্টারনেটের প্রতি আসক্তি কমানোর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। দেশ ও জাতি কে ধ্বংসের হাত থেকে বাচাতে হলে ইন্টারনেটের প্রতি আসক্তি থেকে মুক্ত হতে হবে। এখন আমরা ইন্টারনেটের প্রতি আসক্তি কমানোর উপায় গুলো আলোচনা করবো:
সময় ট্র্যাক করা: ইন্টারনেটে ব্যায়কৃত সময় কে ট্র্যাক করুন। আপনি কতক্ষণ কাটাচ্ছেন ইন্টারনেটে এবং সে সময় টা কি কি করছেন তা খেয়াল করুন। স্বাভাবিক এর চেয়ে বেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করাই আপনার ইন্টারনেট আসক্তি কে প্রমাণ করে। সময় ট্র্যাক করার পর এটা মনে প্রাণে স্বীকার করুন যে আপনি ইন্টারনেটে আসক্ত হয়ে পড়েছেন।
লক্ষ্য নির্ধারণ: একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করুন হোক তা স্বল্পসময়ের জন্য বা দীর্ঘ সময়ের জন্য। সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আপনাকে কি কি করতে হবে ধাপে ধাপে লিখুন। পরিকল্পনা করুন কোন কাজটার পর কোন কাজ করবেন।
ইফেক্টিভ রুটিন: ইফেক্টিভ একটি রুটিন তৈরি করুন নিজের জন্য। ইন্টারনেট থেকে ছাঁটাই কৃত সময় আপনি কি কি কাজ করবেন। আপনার জন্য রুটিন অন্য কাউকে তৈরি করতে বলবেন না। কারণ আপনার সমস্যা, অসুবিধা ও প্রয়োজন সবথেকে ভালো আপনিই জানেন।
নতুন কিছু শেখা: যেটুকু সময় আপনি ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন সেটুকু সময়ে প্রয়োজনীয় জানুন বা শিখুন।
খেলাধুলা: ফোন ছেড়ে অন্যান্য এক্টিভিটিসের দিকে মনোযোগ দিতে পারেন। যেসব খেলাধুলা করতে পারেন সেগুলো ভালো ভাবে করবেন
বই পড়া: বিভিন্ন ধরনের বই পড়তে পারেন। যে ধরনের বই ভালো লাগে পড়ুন। পড়ার অভ্যাস তৈরি করলে ইন্টারনেট আসক্তি কমে যাবে অনেক টাই।
চিকিৎসকের কাছে যাওয়া: ইন্টারনেট আসক্তি অতিরিক্ত হয়ে গেলে ডাক্তারের কাছে যান। ডাক্তারের কথা অনুযায়ী চলুন।
পরিবারকে সময় দেওয়া: পরিবারের সদস্যদের সাথে প্রতিদিন মনখুলে কথা বলা। এতে করে মানসিক চাপ ও স্ক্রিন টাইম দুইটাই কমবে।
ঘুরতে যাওয়া: বন্ধুদের সময় দিন। তাদের সাথে সুন্দর সময় কাটান, জীবন উপভোগ করুন। ঘুরতে যান পরিবারের সদস্য বা বন্ধুদের সাথে।
আশেপাশের মানুষের সাহায্য: পরিবারের সদস্যদের ও বন্ধুদের বলুন আপনাকে যেন তারা ইন্টারনেট আসক্তি থেকে বের হতে সাহায্য করে।
ইন্টারনেটের আসক্তির ফলে আপনার মধ্যে কি কি নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিচ্ছে তা ট্র্যাক করুন। এসব প্রভাব কাটানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন
আপনি যদি ইন্টারনেটের প্রতি আসক্ত হন তবে এই আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন আপনার হাতেই আপনার, আপনার পরিবারের, সমাজের ও দেশের ভবিষ্যৎ।