মানুষের জীবনের পথ চলা খুবই রোমাঞ্চকর। কখনো সুখ কখনো দুঃখ। কেউ জীবন যুদ্ধে হেরে গিয়ে স্থবির হয়ে পড়ে আবার কেউ হার মেনে নিয়ে নতুন প্রত্যয়ে পথ চলা শুরু করে। বর্তমানে মানুষের জীবনে গুরুতর সমস্যা হলো দুশ্চিন্তা। এই নেতিবাচক চিন্তা বন্ধ করতে না পারলে শরীর ও মন উভয়ের ক্ষতি হয়।
অতিরিক্ত চিন্তা আপনার জীবনকে বিষিয়ে তুলতে যথেষ্ট। একজন মানুষের জীবনে সুখ শান্তি সবকিছু নষ্ট হয়ে যায় দুশ্চিন্তার কারণে।
মাথার চিন্তা দূর করার জন্য আপনাকে পদক্ষেপ নিতে হবে। আপনি যদি নিজের আজেবাজে চিন্তা দূর করতে না চান তবে কেউ আপনাকে এই দুশ্চিন্তা থেকে দূর করতে পারবে না। আপনি নেতিবাচক চিন্তা থেকে বের হয়ে আসতে যা যা করতে পারেন-
পজেটিভ চিন্তা-ভাবনা : যেকোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে বা কোনো ক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে তখন সেটি নিয়ে নেতিবাচক চিন্তা থেকে বেরিয়ে ইতিবাচক দিক খুঁজে বের করুন। প্রতিটি জিনিসের ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় দিক থাকে। নেতিবাচক চিন্তা কে ঝেড়ে ফেলে দিন।
সমস্যা সমাধানের চেষ্টা : কোন সমস্যায় পড়লে সব সময় দুশ্চিন্তা করে বসে না থেকে সমস্যার সমাধান খুঁজুন। সমাধান নিয়ে চিন্তা না করে সমস্যা নিয়ে আজেবাজে চিন্তায় নিজের মনকে উদ্বিগ্ন করে রাখবেন না।
আবেগ নিয়ন্ত্রণ : অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করলে মন বিষণ্ন ও মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে এবং ছোট ছোট ব্যাপারে রেগে যাওয়ার মত ঘটনা ঘটে। এই ক্ষেত্রে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুন। না হলে আপনি নিজের দুর্ব্যবহারের জন্য আরো মানসিকভাবে বিষাদগ্রস্থ হয়ে পড়বেন।
নেতিবাচক আলোচনা পরিহার : নিজেকে ভালো রাখতে নিজের কে নেগেটিভ মানুষদের কাছ থেকে দূরে রাখুন। সমালোচনামূলক আড্ডা পরিহার করুন।
নিজেকে সুখী রাখা : অন্যের মতামত দিয়ে নিজেকে কখনো বিচার করবেন না। নিজের কাজ নিয়ে নিজের মতো করে খুশি থাকার চেষ্টা করুন।
অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা : যেকোনো ধরনের সমস্যা বা ব্যর্থতাকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করুন। লব্ধ অভিজ্ঞতা থেকে নিজের ভুলগুলো বের করে নিজেকে সংশোধন করুন। এই সকল সমস্যা থেকে কিভাবে বের হওয়া যায় তা ঠান্ডা মাথায় ভাবুন।
গঠনমূলক সমালোচনা : অপ্রীতিকর সমালোচনা বা নিন্দা বাদ দিয়ে গঠনমূলক সমালোচনা করুন। যাতে এটি ফলদায়ক হয়। এতে চিন্তাভাবনার বিকাশ ঘটে।
যৌক্তিক চিন্তা : আপনি যখন যুক্তি দিয়ে ভাবতে শুরু করবেন তখন মাথা থেকে দুশ্চিন্তা দূর হবে। ফলে আপনি মানসিকভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠবেন। এভাবে নিজেকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে পারলে বহু কঠিন কাজ সহজ হয়ে যাবে।
মনোযোগ প্রদান : ভালো কর্মকান্ডে নিজের সর্বোচ্চ মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করুন। তাহলে অনর্থক চিন্তা ভাবনা মাথা থেকে দূর হবে। অস্থিরতা কাজ করলে নিজেকে শান্ত ও নিরিবিলি পরিবেশে নিয়ে যান। এক্ষেত্রে মনোযোগ চর্চার জন্য মেডিটেশন বা বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম করতে পারেন।
অতীতকে পেছনে ফেলা : অতীতে কি ঘটেছে তা নিয়ে বর্তমান জীবনকে স্থবির করে তুলবেন না। অতীতকে মেনে নিতে শিখুন।
কথা বলা : অতিরিক্ত আজেবাজে চিন্তা মাথা থেকে দূর করতে মনের সকল উদ্বিগ্নতা কাছের মানুষের সাথে শেয়ার করুন। এতে আপনার উদ্বিগ্নতা কিছুটা হলেও কমবে। কাছের মানুষের দেওয়া ভরসা আপনাকে উজ্জীবিত করে তুলবে।
ছোট ছোট বিষয় কৃতজ্ঞতা : ছোট ছোট বিষয় যা যা আপনি পেয়েছেন তা ভুলে যাবেন না। সুন্দর স্মৃতিকে ম্লান হতে দেবেন না। জীবনে যা পেয়েছেন তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকার চেষ্টা করুন।
নিজেকে ব্যস্ত রাখা : যেসব কাজে আপনি আগ্রহী সেসব কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। নতুন কিছু শিখুন। সৃজনশীল কাজে যুক্ত হোন।
আজেবাজে চিন্তা কে গুরুত্ব না দেওয়া : মাথা থেকে চিন্তা দূর করার উপায় হলো চিন্তাকে গুরুত্ব না দেওয়া। যত কম আপনি গুরুত্ব দেবেন তত বেশি আপনার জীবন সহজ-সরল ও স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।
আল্লাহর উপর ভরসা : দুশ্চিন্তা দূর করার অন্যতম উপায় হলো আল্লাহর উপর ভরসা করা। আল্লাহর উপর ভরসা করলে জীবনে প্রশান্তি বৃদ্ধি পায় এবং হতাশা দূর হয়।
দুশ্চিন্তা মুক্তির জন্য ইসলামিক উপায় হলো এই দোয়াটি হলো:
‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুযনি, ওয়া আউজু বিকা মিনাল আজযি ওয়াল-কাসালি, ওয়া আউজু বিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া আউজু বিকা মিন গালাবাতিদ দাইনি ওয়া কাহরির রিজাল।’
জীবন সুন্দর হবে যখন আপনি মাথা থেকে আজেবাজে চিন্তা দূর করবেন। নিজেকে নতুন ভাবে বাঁচানোর পদক্ষেপটা আপনাকে নিজেকে নিতে হবে। নেতিবাচক চিন্তা মুক্ত সুন্দর জীবন উপভোগ করুন।