ব্যর্থতাকে অনেক সময় সফলতার বিপরীত হিসাবে দেখা হয়। কিন্তু আসলেই কি ব্যর্থতা সফলতার বিপরীত? যদি তা হয়ে থাকে তবে ব্যর্থতা থেকে সফলতার উপায়গুলি কি কি? ব্যর্থতা থেকে সফলতার এমন কোনো গল্প আছে যা জানলে হয়তো নিজেকে অনুপ্রেরণা দেওয়াটা সহজ হবে? বিস্তারিত থাকছে পুরো লেখাটিতে।
শুরুতে জানবো ব্যর্থতা কিভাবে সফলতা হতে পারে! সোজা কথায় আপনি যদি ফেইল না করেন, ব্যর্থ না হোন সেক্ষেত্রে কোনোভাবেই সফলতার পথ খুঁজে পাবেন না। সফল হতে হলে আপনাকে ব্যর্থতার মতো গুরুত্বপূর্ণ ধাপটি পেরিয়ে আসতে হবে।
এতে বোঝা যাবে আপনার আদৌ কোনো দূর্বলতা আছে কিনা! যদি থাকে তবে সেগুলি কি কি! কিভাবে এসব দূর্বলতা দূর করা যায়। জীবনে কাজে লাগাতে হবে ব্যর্থতা থেকে সফলতার উপায়গুলিকে!
আসুন এবারে ব্যর্থতা থেকে সফলতার উক্তি হিসাবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা জেনে নিই। যা আমাদের জীবনে ব্যর্থতা থেকে সফলতার উপায়গুলিকে কাজে লাগাতে সাহায্য করবে:
১. সাফল্য যেমন চূড়ান্ত নয়, তেমনি ব্যর্থতাও কখনো মারাত্মক নয়! এই পথে নিজেকে চালিয়ে যাওয়ার সাহস থাকাটাই গুরুত্বপূর্ণ। – উইনস্টন চার্চিল
২. জীবনে ব্যর্থতা হলো সেই মশলা যা সাফল্যকে তার উপযুক্ত স্বাদ দেয়। – ট্রুম্যান ক্যাপোট
৩. আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় গৌরব হতে উচিত কখনই ব্যর্থ না হওয়া, কিন্তু প্রতিবারই আমরা ব্যর্থ হয়ে উঠার মাধ্যমে সফল হই। – কনফুসিয়াস
৪. আমি আমার জীবনে বারবার বহুবার ব্যর্থ হয়েছি। আর সেই কারণেই আমি সফল হয়েছি। – মাইকেল জর্ডন
৫. যে কখনো ভুল করেনি, সে কখনোই নতুন কিছু চেষ্টা করেনি। – আলবার্ট আইনস্টাইন
৬. একটি ব্যর্থতায় লুকিয়ে থাকতে পারে অন্য একটি সুযোগ তৈরির উপায় – ম্যারি কুরি
৭. ব্যর্থতার মধ্যে বরাবরই রয়েছে সফলতার বীজ। – ডেল কার্নেগি
এসব ব্যর্থতা থেকে সফলতার উক্তিগুলি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ব্যর্থতা হলো সফলতার পথের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং তা থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যাওয়াটাই প্রকৃত সফলতার সিঁড়ি।
এবার সরাসরি চলে আসি ব্যর্থতা থেকে সফলতার উপায়ের ব্যাপারে৷ এই প্রসেসটিকে আপনি ব্যর্থতা থেকে বাউন্সিং ব্যাকও বলতে পারেন। যারা জানেন না কিভাবে ব্যর্থতা থেকে বাউন্সিং ব্যাক করতে হয় তারা নিচের প্রসেসগুলি ফলো করুন:
ব্যাক বাউন্স করার প্রথম ধাপ হল ব্যর্থতা স্বীকার করে নেওয়া। অনেকেই কোনো ক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে তা স্বীকার করে নিতে রাজি হয় না। মনে করে ব্যর্থতা স্বীকার করা মানেই আবার ব্যর্থ হওয়া। যা পুরোপুরি ভুল ধারণা। ব্যর্থতাকে অস্বীকার করলে তা আপনার সফলতার পথে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সুতরাং স্বীকার করে নিন যে আপনি ব্যর্থ হয়েছে।
আপনি ব্যর্থ হয়েছেন কিনা তা বুঝতে নিজেকে কিছুটা সময় দিন। সাথে সাথে সমাধানের স্টেপ গ্রহণ না করে ভুলের প্রভাব পড়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন৷ ব্যর্থতা থেকে সফলতার উপায় হিসেবে বোঝার চেষ্টা করুন আপনার ভুলটি কতটুকু এফেক্টিভ ছিলো। এতে করে সমাধান বের করাটা সহজ হবে।
ভুল যা হবার হয়েছে। এখন আপনাকে নতুন লক্ষ্য স্থির করতে হবে, করতে হবে নতুন প্ল্যান। বাস্তবসম্মত লক্ষ্য নির্ধারণে আপনি ব্যর্থতা থেকে যা শিখেছেন তা ব্যবহারের চেষ্টা করুন। বড় লক্ষ্য বা প্ল্যান হলে তা ছোট ছোট ধাপ আকারে ভাগ করে নিন। যাতে লক্ষ্য পূরণের এই জার্নি আপনার সহজ মনে হয়।
ব্যর্থতা থেকে সফলতার উপায় হিসাবে সবসময় পজেটিভ থাকার চেষ্টা করুন। কারণ নিজেকে নিয়ে বা নিজের ব্যর্থতা নিয়ে সবসময় নেগেটিভ চিন্তাভাবনা আপনাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাবে। না পারবেন নতুন কোনো প্ল্যান অনুযায়ী কাজ করতে, না পারবেন নিজের ব্যর্থতাকে মেনে নিতে। সুতরাং নিজের ব্যাপারে এবং চারপাশের ব্যাপারে সবসময় পজেটিভ থাকুন।
এবার চলুন একজন কিংবদন্তির জীবনের ব্যর্থতা থেকে সফলতার গল্প জানি৷ বলছিলাম রাইট ব্রাদার্সের কথা। এই ভদ্রলোক উড়তে পারব এমন যন্ত্র বানাতে গিয়ে বারংবার ব্যর্থ হয়েছেন। যন্ত্রটি বানাতে গিয়ে তিনি অসংখ্য বিপত্তি এবং বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে।
অনেকে ভেবেছিল রাইট ব্রাদার্সের এই স্বপ্ন বুঝি সত্য হবার নয়। কিন্তু তিনি দমে যাননি। লেগে থেকেছেন এবং ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ব্যর্থতা থেকে সফলতার উপায়। অবশেষে ১৯০৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর তিনি প্ল্যান বানাতে সক্ষম হোন এবং সফল হোন!
এবার আসি ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিতে যা যা করতে হবে সে ব্যাপারে:
অনেকেই ব্যর্থতার পর মনোনিবেশ করতে পারেন না। ফলে দেখা যায় জীবনে কোনোভাবে ব্যর্থতা থেকে সফলতার উপায়গুলিকে কাজে লাগানো হচ্ছে না। এক্ষেত্রে চলুন জেনে নিই ব্যর্থতার পর কিভাবে মনোনিবেশ করা যায় সে-সম্পর্কে কিছু মাথানষ্ট টিপস।
ব্যর্থ হবার পর ছোট্ট একটি ব্রেক নিন। কারণ কখনও কখনও, একটি ছোট বিরতি আপনার মন পরিষ্কার করে দিবে, মেন্টাল প্রেশার কমিয়ে দেবে অনেকখানি। জোরে জোরে শ্বাস নিন, যাতে আপনার একাগ্রতা বাড়ে। এরপর এমন কাজগুলিকে বাছাই করে নিন যেগুলি আগে করা উচিত। পাশাপাশি বাস্তবসম্মত লক্ষ্যের সাহায্যে আপনি টু ডু লিস্ট সাজানোর চেষ্টা করুন৷