পাশাপাশি জেনে রাখা উচিত ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির ঔষধ এবং ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়গুলি কি কি সে-সম্পর্কে। বিস্তারিত জানতে সাথেই থাকুন।
ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির ঔষধ সম্পর্কে জানার আগে আপনাকে জানতে হবে আপনি আদৌ ডিপ্রেশনের রোগী কিনা। কারণ রোগহীন শরীরের ঔষধ সেবন করলে তা হিতে বিপরীত হতে পারে। যাইহোক ডিপ্রেশনের ৮টি মারাত্মক লক্ষণগুলি হলো:
১. শূন্যতা বা হতাশার কারণে রোগী সবসময় দুঃখ অনুভব করতে পারে। সবসময়ই রোগীর মন খারাপ থাকতে পারে। চারপাশে ভালোকিছু ঘটলে রোগী খুশি না হয়ে প্রতিক্রিয়াহীনদের মতো আচরণ করবে। পাশাপাশি যদি খারাপ কিছু ঘটে সেক্ষেত্রে রোগী একদিকে নিজের মেজাজ হারাবে, অন্যদিকে রোগী অসম্ভবভাবে মন খারাপ করবে।
২. কোনো কিছুতে রোগী আগ্রহ বা আনন্দ পাবে না। যাকে কিনা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় অ্যানহেডোনিয়া রোগ। এই রোগটি ডিপ্রেশনের এই সাব ক্যাটাগরি রোগ। যা দেখা দিলে রোগী বন্ধু, পরিবার থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে চাইবে। বিভিন্ন সামাজিক কাজকর্ম থেকেও চেষ্টা করবে নিজেকে দূরে রাখার।
৩. ক্ষুধা বা ওজনের পরিবর্তন হলো ডিপ্রেশনের ৮টি মারাত্মক লক্ষণগুলির একটি। যা দেখা দিলেই রোগীকে ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির ঔষধ সেবন করতে হবে। অনেক সময় প্রতি মাসে শরীরের ওজন ৫% এর বেশি কমে যেতে পারে। আর এই সমস্যাকে ধরে নিতে হবে রোগীর ডিপ্রেশনের লক্ষ্মণ। পাশাপাশি রোগীর অনেক বেশি ক্ষুধামন্দা কিংবা ক্ষুধা লাগতে পারে।
৪. ডিপ্রেশনে আক্রান্ত রোগীর ঘুমের ব্যাঘাতজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। দেখা দিতে পারে অনিদ্রা মানে ঘুমিয়ে পড়তে বা ঘুমিয়ে থাকতে অসুবিধাজনিত সমস্যা এবং হাইপারসোমনিয়া অর্থ্যাৎ অতিরিক্ত ঘুমানোর সমস্যা। এই ধরণের সমস্যার কারণে রোগীর প্রত্যেকদিনকার রুটিন পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে।
৫. ডিপ্রেশনের ৮টি মারাত্মক লক্ষণের মধ্যে অন্যতম লক্ষ্মণ হলো রোগী সবসময় ক্লান্তিবোধ করবে। ক্লান্তি বা শক্তির অভাবে দেখা যাবে সারাদিন ধরে রোগী কোনো কাজই করতে পারছে না। সাধারণ কাজকর্ম এমনকি ছোটখাটো শারীরিক কার্যকলাপেও রোগীর অনীহা চলে আসতে পারে।
৬. ডিপ্রেসড রোগী সবসময় নিজেকে মূলহীন ভাবতে থাকে। তার মধ্যে কাজ করবে অনেক বেশি অপরাধবোধ। এই ধরণের রোগী কোনো দোষ না করেও নিজের অপরাধবোধ এমনকি নিজের বেঁচে থাকার বিষয়টি নিয়েও যথেষ্ট মন খারাপ করে, ওভারথিংক করে এবং নিজেকে অনেক ছোট মনে করতে থাকে।
৭. আপনার মাঝে যদি সবসময় আত্মহত্যার প্রবণতা কাজ করে তাহলে ধরে নেবেন আপনিও একজন ডিপ্রেশন রোগী এবং আপনাকে ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির ঔষধ সেবন করতে হবে। কারণ মনোরোগ চিকিৎসকদের মতে মৃত্যু সম্পর্কে ঘন ঘন চিন্তা, আত্মহত্যার ধারণা ইত্যাদি একজন মানুষের মাঝে দেখা দেওয়া মানেই সে একজন ডিপ্রেসড ব্যাক্তি।
৮. কোনোকিছুতে মন বসাতে না পারে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে না পারাটাও কিন্তু ডিপ্রেশন রোগের লক্ষ্মণ। কারণ ডিপ্রেশনের কারণে একজন মানুষের একাগ্রতা, স্মৃতিশক্তি এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়।
ডিপ্রেশন হলে একজন মানুষকে বিভিন্ন সমস্যা ফেইস করতে হয়। অনেকসময় দেখা যায় ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির ঔষধ সেবন করার পরও এসব সমস্যা দূর করতে যথেষ্ট খাটা লাগছে। চলুন তবে নিজেদের সতর্ক করতে জেনে নিই ডিপ্রেশন হলে কি কি সমস্যা হয়:
সোশ্যাল ডিস্টেন্স: একজন ডিপ্রেসড রোগী সবসময়ই বন্ধু, পরিবার, এবং সামাজিক কার্যকলাপ থেকে নিজেকে দূরে রাখে। ফলে তৈরি হয় সামাজিক দূরত্ব। ব্যাহত হয় ব্যাক্তিগত বিকাশ।
অলসত রুটিন: ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায় খুঁজতর খুঁজতে বা ডিপ্রেসড থাকতে থাকতে অনেকেই দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে ভুলে যায়। ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা, গৃহস্থালির কাজ এবং কর্মক্ষেত্রে বা স্কুলে দায়িত্ব পালনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ ইগনোর করার কারণে ব্যাক্তিজীবনে ডিপ্রেসড রোগী অনেক পিছিয়ে পড়ে।
জ্ঞান কমে যায়: একজন ডিপ্রেসড মানুষের জ্ঞান কখনো তো বাড়েই না! বরং আরো কমে আসে। পাশাপাশি দেখা দেয় একাগ্রতা, স্মৃতিশক্তি এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিভিন্ন সমস্যা। সবমিলিয়ে যেকোনো কাজে ফোকাস করাটা এসব ব্যাক্তিদের জন্যে বেশ কঠিন হয়ে পড়ে।
মানসিক কষ্ট: মেন্টাল পেইন হলো ডিপ্রেশন সমস্যার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। এই সমস্যার সাহায্যে ডিপ্রেশন একটি হাসিখুশি মুখকে দুঃখের চরম গভীরে নিয়ে যায়।
আর্থিক চাপ: ডিপ্রেশন হলো একটি রোগ। ফলে ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির ঔষধ কিনতে গিয়ে রোগীকে নিজের পেছনে প্রচুর খরচ করতে হয়। তাছাড়া নিজে যেহেতু ডিপ্রেসড রোগী সেহেতু অনেক সময় অর্থ উপার্জন করাটাও কঠিন হয়ে পড়ে।
সাধারণত ডিপ্রেশন রোগকে অফিসিয়ালি বলা হয় এন্টিডিপ্রেসেন্টস। আর ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির ঔষধ হিসাবে সেবন করা যেতে পারে:
ফ্লুওক্সেটিন: এটি ডিপ্রেশন এবং OCD রোগের জন্য সেবন করা হয়ে থাকে। পাশাপাশি যারা প্যানিক ডিসঅর্ডারে ভুগছেন তারাও এই ঔষধ সেবন করতে পারেন। তবে এই ঔষধ সেবনে অনিদ্রা, যৌন সমস্যা, বমি বমি ভাব, মাথাব্যথার মতো জটিল কিছু সাইড এফেক্টও সহ্য করতে হবে আপনাকে।
সার্ট্রালাইন: অন্যদিকে সার্ট্রালাইন নামক একটি মেডিসিনকেও ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির ঔষধ হিসাবে ধরা হয়। PTSD, OCD, ডিপ্রেশন ইত্যাদি সমস্যার জন্য এই ঔষধ সেবনের নিয়ম আছে। আর সাইড এফেক্ট হিসাবে এই ঔষধের ডায়রিয়ার পয়েন্টটি সবসময় মাথায় রাখা জরুরি।
মনে রাখবেন ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির ঔষধ সেবন করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। তবে হ্যাঁ! ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার পাশাপাশি আপনি নিজে নিজেই ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায় ফলো করতে পারেন। যেমন:
আশা করি নিয়মিত ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির ঔষধ সেবন করলে এবং ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায় মেনে জীবনযাপন করলে আপনি অতিদ্রুত ডিপ্রেশন রোগ থেকে বেঁচে ফিরবেন।