এই যুগে স্বাভাবিকভাবেই সাইবার অপরাধ, ইন্টারনেট হয়রানির বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে। কারণ মোবাইল ফোন ও অনলাইন যোগাযোগ মানুষকে অনেক সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার পাশাপাশি অনেকেরই বিশেষ করে কিশোর ও তরুণদের মাঝে ক্ষতিকারক ওয়েবসাইট ব্যবহারের প্রবণতা, হয়রানির ব্যাপারটিও ভাবিয়ে তুলছে সকলকে। মূলত এই হয়রানি বা ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত থাকার জন্যই আমাদের জানতে হবে কিভাবে নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায় সে সম্পর্কে।
ব্যবহারকারীদের সচেতনতাই পারে এই সকল মারমুখী সমস্যা থেকে রেহাই মেলাতে। যাদের ইন্টারনেট সম্পর্কে ধারণা নেই, যারা ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন অথবা আধুনিক যোগাযোগের মতো বিষয়গুলো সম্পর্কে শুধুই শুনেছে, কিন্তু জানে না কিভাবে এগুলো সম্পর্কে আরো জ্ঞান লাভ করা যায়, বা কিভাবে এগুলো তাদের জীবনে কাজে লাগবে মূলত তাদের উপযোগী করেই আজকের আর্টিকেলটি সাজানোর চেষ্টা করেছি।
আসুন এবার নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার নিশ্চিত করার কিছু কৌশল সম্পর্কে জেনে নিইঃ-
ডিভাইস সুরক্ষিত রাখা মানেই নিরাপদে ইন্টারনেট ব্যবহার করার শক্তিশালী কৌশল অবলম্বন করা। কারণ আপনার ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যম হিসেবে সবার আগে এই ডিভাইসের কথাই মাথায় আসে। ফলে ডিভাইস সুরক্ষিত রাখলেই নিরাপদে ইন্টারনেট ব্যবহার করা সম্ভব। সবসময় ডিভাইসের সফটওয়্যার আপ-টু-ডেট রাখার চেষ্টা করুন। যা আপনার ডিভাইসকে নিরপত্তা সংক্রান্ত সমস্যা থেকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করবে। আপনি নিয়মিত যেসব সফটওয়্যার ব্যবহার করেন অর্থ্যাৎ আপনার ডিভাইসের ব্রাউজার, অপারেটিং সিস্টেম, প্লাগইন ও ডকুমেন্ট এডিটরে সবসময় আপ-টু-ডেট সফটওয়্যার ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।
এছাড়াও আপনার ডিভাইসটি যখন ব্যবহার করছেন না তখন সেটিকে লক করে রাখা কিন্তু খুব জরুরি। স্লিপ মুডে গেলেই ফোন লক করার সিস্টেম চালু রাখার টিপসটি আপনার ডিভাইসকে আরো বেশি সুরক্ষিত রাখবে।
মনে রাখবেন ডিভাইসে সবসময় আপনার গুগল একাউন্ট লগইন রাখা খুব জরুরি। এটি আপনার ফোন হারিয়ে গেলে তার সমস্যা সমাধানে কাজে লাগতে পারে। এক্ষেত্রে অন্য কোথায়ও জিমেইল লগ ইন করে ‘আপনার ফোন খুঁজুুন” অপশনে গিয়ে রিমোট ভাবে আপনি আপনার ডিভাইসের লোকেশন শনাক্ত করতে পারবেন। পরবর্তীতে আপনি প্রয়োজনে ডিভাইস লক করতে পারবেন।
সোশ্যাল একাউন্ট বর্তমানে আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠায় আমাদের ব্যক্তিগত জীবনের অনেক তথ্যই আমরা এসব প্লাটফর্মে শেয়ার করে থাকি। সোশ্যাল মিডিয়াই এখন আমাদের পরিচিত, অপরিচিত সবার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করার একমাত্র ভরসা। সুতরাং সোশ্যাল একাউন্টগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বেশ বুদ্ধিমানের কাজ।
যেকোনো প্রয়োজনে এবং কোনো রকম সন্দেহ হলে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন অথবা পুনরায় ভেরিফাই করুন। আপনার একাউন্টটি অন্য কোথাও লগইন করা থাকলে দ্রুত ব্যবস্থা নিন। এক্ষেত্রে একাউন্ট খোলার সময় সিকিউরিটি কোশ্চেন চালু রাখতে পারেন৷ যা সকলের অজানা হওয়া চাই।
এছাড়াও সবসময় এমন পাসওয়ার্ড দেয়ার চেষ্টা করুন, যা অন্যের পক্ষে ধারণা করা যথেষ্ট কঠিন হবে। কেননা নিরাপদে ইন্টারনেট ব্যবহার করার একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হলো শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার। তবে মাথায় রাখবেন পাসওয়ার্ডটি যেনো আপনার জন্য মনে রাখা সহজ হয়। এক্ষেত্রে পাসওয়ার্ড শক্তিশালী করতে কমপক্ষে আট ডিজিটেট পাসওয়ার্ড রাখাটা বেশ বুদ্ধিমানের কাজ বলে আমি মনে করি।
অনেকেই পাবলিক প্লেসের ওয়াইফাই, বিনামূল্যে পাওয়া ওয়াইফাই ব্যবহার করে থাকেন। এসব বোকামি থেকে সতর্ক থাকুন। মনে রাখবেন ওপেন ওয়াইফাই ব্যবহার করলে আশেপাশের যেকেউ আপনার মূল্যবান তথ্য পেয়ে যেতে পারে। কারণ অনেক সময় এই নেটওয়ার্ক এনক্রিপ্ট করা থাকে না।
ওয়েব ব্রাউজ, পাসওয়ার্ড বা ক্রেডিট কার্ড নাম্বার এসব তথ্য লেখার সময় আমাদের যেকোনো নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতেই হয়। সুতরাং এসব তথ্য লেখার সময়ে যে সাইটে প্রবেশ করেছেন তার কানেকশন চেক করুন। লক্ষ্য রাখবেন, Chrome ব্রাউজারে ইউআরএল এর ফিল্ডে সম্পূর্ণ বন্ধ একটি তালার আইকন দেখা সাইট মানেই নিরাপদ সাইট।
শেষকথা
বর্তমানের ইন্টারনেট প্রযুক্তির জয়জয়কার অবস্থার মাঝে আমরা যেনো নিজেদের তথ্যকে অনিরাপদ করে না তুলি। আসুন আমরা সতর্কতা এবং ইন্টারনেটের সঠিক ব্যবহারকে পুঁজি করে এই ডিজিটাল প্রযুক্তিকে আরো বহুদূর নিয়ে যাই।